অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জাপানি রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকির মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। রাষ্ট্রদূতের মন্তব্যে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বিব্রত ও মর্মাহত জানিয়ে বক্তব্যের ওই অংশটুকু প্রত্যাহারের জন্য রাষ্ট্রদূতের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও এসবি প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ১৪ নভেম্বর রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) এবং ফ্রেডরিক অ্যাবার্ট-স্টিফটুং (এফইএস) আয়োজিত মিট দ্য অ্যাম্বাসাডর অনুষ্ঠানে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংক্রান্তে এক প্রশ্নোত্তরে জাপানি রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি পুলিশের বিরুদ্ধে যে ভিত্তিহীন ও অনাকঙ্ক্ষিত অভিযোগ উত্থাপন করেছেন তাতে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। তাঁর মন্তব্যে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য অত্যন্ত বিব্রত ও মর্মাহত হয়েছে। অ্যাসোসিয়েশন তাঁর এমন বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

ওই অনুষ্ঠানে জাপানি রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমি শুনেছি, (গত নির্বাচনে) পুলিশের কর্মকর্তারা আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি করেছেন। আমি অন্য কোনো দেশে এমন দৃষ্টান্তের কথা শুনিনি।’

বিবৃতিতে বলা হয়, জাপানি রাষ্ট্রদূতের এমন বক্তব্য অসমর্থিত, ভিত্তিহীন ও অনভিপ্রেত। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংক্রান্তে দেশের মূলধারার সব গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং দেশি-বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের মতামতে সর্বত্রই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে। গত নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত বিহীন ও যাচাই-বাছাই ব্যতিত জাপানি রাষ্ট্রদূতের মতো দায়িত্বশীল ব্যক্তির এমন মন্তব্য পুলিশসহ দেশবাসীকে অবাক করেছে।

নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা সংক্রান্তে প্রকৃত তথ্য হলো, বাংলাদেশ পুলিশ নিবার্চন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা প্রদান করে থাকে। ভোটারের প্রার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়া বা ভোটকেন্দ্রের ভেতরে ভোটারদের ভোট প্রদানে পুলিশের কোনো ভূমিকা বা কার্যক্রম নেই। বাংলাদেশ পুলিশ সব নির্বাচনে অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তা প্রদান করে থাকে। পুলিশের মতো একটি পেশাদার বাহিনী সম্পর্কে জাপানি রাষ্ট্রদূতের এমন বক্তব্য অনাকাঙ্খিত ও অপ্রত্যাশিত।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, পুলিশের অকুতোভয় বীর সদস্যরা ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। প্রায় চৌদ্দ হাজার পুলিশ সদস্যের সম্মুখ সমরে অংশগ্রহণ ও প্রায় সহস্রাধিক পুলিশ সদস্যের আত্মত্যাগ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত ও গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের উত্তরাধিকারী পুলিশ সেবার সুমহান ব্রত নিয়ে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।

‘সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ দমন, আইনশৃঙ্খলা জনগণের জানমাল ও সরকারি সম্পদ রক্ষায় পুলিশ পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে পুলিশের সাফল্য ইতোমধ্যে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। অনুরূপভাবে অতিমারি করোনায় পুলিশের সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা আক্রান্ত ও অসুস্থ ব্যক্তির সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা, করোনায় মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তির সৎকার করা, দুস্থ ও অসহায়দের খাদ্যসামগ্রী বিতরণসহ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে প্রচলিত পেশাগত দায়িত্বের পাশাপাশি মানবতার অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।’

জাপান বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ও উন্নয়নের বৃহৎ অংশীদার উল্লেখ করে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ঐতিহাসিকভাবে জাপানের সঙ্গে সুগভীর অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ পুলিশ সম্পর্কে জাপানি রাষ্ট্রদূতের সাম্প্রতিক মন্তব্য বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্যকে হতাশ এবং জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে।

বিবৃতিতে রাষ্ট্রদূতের পুলিশ নিয়ে বক্তব্যের অংশটুকু প্রত্যাহারের জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। এতে বলা হয়, তাঁর বক্তব্যের উল্লিখিত অংশ প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। পাশাপাশি পুলিশ সম্পর্কে ভবিষ্যতে এমন মন্তব্য করার ক্ষেত্রে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন তাঁর আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করছে।

‘পুলিশ সর্বদা রাষ্ট্রের কল্যাণ ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে নিয়োজিত একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী। দেশের শান্তিপ্রিয় ও উন্নয়নকামী মানুষের পাশে থেকে রাষ্ট্র কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব সুচারূরূপে পালনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে সক্ষম হবে বলে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে।’